আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সংস্থা সম্পর্কে ইতিকথা

মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহু পবিত্র কোরআনুল কারীমকে অনুধাবন করার জন্য নাজিল করেছেন। একমাত্র তিলাওয়াতের জন্যেই নয়। কোরআনের তিলাওয়াত যেমন একটি ইবাদত, তেমনি কোরআন অনুধাবন করা, বোঝা এবং কোরআন নিয়ে চিন্তা করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরআন নাযিলের উদ্দেশ্যই অনুধাবন করা। আল্লাহ তাআলা সূরা সোয়াদে (৩৮) বলেন, আমি আপনার উপর এক বরকতময় কিতাব নাজিল করেছি যেন তারা এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ উপদেশ গ্রহণ করে।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারীমকে তারতীলের সাথে তিলাওয়াত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তারতীলের অর্থ হচ্ছে, কোরআনকে বিশুদ্ধ করে পড়া, তবে তারতীলের আসল উদ্দেশ্য পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ উচ্চারণসহ শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ চিন্তা করে তা দ্বারা প্রভাবান্বিত হওয়া।
সূরা মায়েদায় (৬৭) আল্লাহ তায়ালা বলেন: হে রাসূল! আপনি আপনার রবের পক্ষ থেকে যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে তা যথাযথভাবে প্রচার করুন। যদি তা না করেন, তাহলে তো আপনি রিসালাতকেই পৌছালেন না।
আল্লাহর দেওয়া এ দায়িত্ব পালনার্থে ও দীন বিজয়ের লক্ষ্যে আখেরী নবী মুহাম্মদ সা. কোরআনের দাওয়াত দিয়ে গিয়েছেন। তাঁরপর সাহাবায় আজমায়ীন কোরআনের বিধান ও কোরআনের প্রচার, কোরআনকে বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি সম্প্রসারিত করেছেন। যা আজ পর্যন্ত সিলসিলা চলমান। আরব বিশ্বে কোরআনকে বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত এবং অনুধাবনসহ হাকিকতান পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাব্যবস্থা, বোর্ড ও প্রচার কেন্দ্র/সংস্থা বিদ্যমান হলেও আমাদের উপমহাদেশে হয়ে ওঠেনি। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে হাদিস, তাফসির ও কোরআন হিফজের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব থাকলেও রেওয়াত, ইলমে ক্বিরাত, দপতুল মুসহাফ, ইত্যাদি বিষয়ে স্বনির্ভর কোন প্রতিষ্ঠান/সংস্থা নেই।
যুগে যুগে আকাবীরগণ অনেক স্বপ্ন দেখেছেন, কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণে নকীবুল ওলামা আদিবুল উদাবা ইমামে নাহু শাইখুল হাদিস আল্লামা ইসহাক মাদানী রহ. আল্লাহর ঘরে বারবার দোয়া করেছেন এবং তাঁর সুযোগ্য বড় সন্তানকে এ কাজের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, প্রথমিকভাবে উপরে উল্লিখিত তিনটি আয়াতকে বিষয় বস্তু করে কর্মপদ্ধতি লিখে দিয়ে ছিলেন।
আল্লামা ইসহাক মাদানী রহ. ইন্তেকালের অর্ধযুগ পর কোরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে রূপায়িত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের জীবনধারা অনুসরণ করে আল্লাহর কালামকে সর্বত্র প্রতিষ্ঠার চলমান এই প্রচেষ্টাকে বেগবান করার লক্ষ্যে দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে কোরআনের চর্চা প্রচার প্রসার ও আদর্শিক ময়দানকে বিস্তৃত করার উদ্দেশ্য নিয়ে ২রা ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে আগত কিবারে ওলামাদের সম্মতিক্রমে আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সংস্থা নামটি নির্ধারণ করা হয়। এবং ২৪ মে ২০১৯ শুক্রবার পবিত্র নগরী মক্কাতুল মোকাররমা থেকে শায়েখ সাদ সাইফুল্লাহ মাদানীর হাত ধরে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।
অল্প সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্ববিখ্যাত ক্বারীদের বাংলাদেশে এনে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ১১টি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে। মানবতার সেবায় বন্যায় দুর্গত, করোনায় পর্যদুস্ত অসহায় মানুষের পাশে অব্যাহতভাবে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কোরআন প্রেমিদের ইচ্ছেপূরণে রমজান মাসব্যাপী বিশ্ববরেণ্য ক্বারীদের লাইভ কোরআন তিলাওয়াত রেডিও কোরআনে সম্প্রচারিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে কোরআন বিতরণ, মাসিক কোরআনি পত্রিকা প্রকাশসহ নানাবিধি কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্যে এখন বাংলাদেশে কোরআন প্রেমিদের সর্ববৃহৎ সংগঠন হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। এবং বাংলাদেশের সাথে বহির্বিশ্বের সম্পর্ক দৃঢ় ও ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করেছে সেই সাথে বাংলাদেশের মর্যাদা উড্ডীন হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।
আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সংস্থা মানব জীবনের পাঁচটি স্তরে কোরআন চর্চার মাধ্যমে চুড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করতে চায়।
ক) ব্যক্তি জীবনে কোরআনের হুকুমকে প্রাধান্য দিতে সুন্দর তিলাওয়াত ও পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন।
খ) সমষ্টিগত ও জামাতবদ্ধ জীবনে কোরআনের প্রতি উৎসাহিত করতে আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সম্মেলনের আয়োজন।
গ) ছাত্র তরুণদের মাঝে কোরআনকে আরো জনপ্রিয় ও তাদের উদ্বুদ্ধ করতে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা বাস্তবায়ন।
ঘ) আল্লাহর কোরআনের বিকৃতি অপব্যাখ্যা ও কোরআনের বিরুদ্ধে অবমাননার বিরুদ্ধে কার্যকর সচেতন ও সজাগ রাখতে প্রচার প্রকাশনা নিশ্চিত করণ।
ঙ) রাষ্ট্রীয় পারিবারিক ও সামগ্রিক জীবনের অমূল্য সময়গুলো কোরআনের সাথে অতিবাহিত করতে প্রতিটি ব্যক্তিকে সর্বস্তরে কোরআনের উপর অটুট রাখতে ব্যবস্থাগ্রহণ।
আল্লাহ তায়ালার একজন অনুগত বান্দা ও তাঁর খলিফা হিসেবে এবং কোরআনের একজন অনুসারী ও আশেক হিসেবে কোরআনময় জীবন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৃহত্তর এ জামাতে আপনাকে শামিল হওয়ার দাওয়াত দিচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সংস্থা বাংলাদেশ।